সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশন

সরকারি চাকরিতে যোগদান বা চাকরি স্থায়ীকরনে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন। সরকারি চাকরিতে আপনি যোগদানের যোগ্য কিনা বা আপনার চাকরি স্থায়ীকরণ করা হবে কিনা সেটিতে গুরুত্বপূর্ন প্রভাব ফেলে পুলিশ ভেরিফিকেশন। মূলত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট যদি নেগেটিভ হয় তাহলে আপনি কোন ভাবেই সরকারি চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন না। সুতরাং সহজেই ধারনা করতে পারছেন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন কতটা গুরুত্বপূর্ন। এই আলোচনায় মূলত আমরা সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কীয় খুঁটিনাটি বিষয় গুলোই বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা চেষ্টা করব। এখানে যে বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে তা হলো পুলিশ ভেরিফিকেশন কি, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে কি কি তথ্য যাচাই করা হয় ইত্যাদি। তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি।

পুলিশ ভেরিফিকেশন কি?

ভেরিফিকেশন শব্দের অর্থ যাচাই। সুতরাং পুলিশ ভেরিফিকেশন শব্দের অর্থ দাঁড়ায় পুলিশ কর্তৃক তথ্য যাচাই। ইংরেজিতে এটি কে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সও বলা হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশন সাধারণত করা হয়, সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে যোগদাগের পূর্বে বা চাকরি স্থায়ী করনের পূর্বে। এছাড়াও পাসপোর্ট এবং বিভিন্ন লাইসেন্স করার সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। সরকারি চাকরির সময় আবেদনকারী তথ্য প্রদান করেন সেসকল তথ্য সঠিক আছে কিনা সেটার সত্যতা যাচায়ের পদ্ধতিই হচ্ছে সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশন। এছাড়াও চাকরির ভেরিফিকেশন কালে আবেদনকারীর চারিত্রিক ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কেও খুঁটিনাটি তথ্য যাচাই করা হয়।

রিলেটেড পোস্ট : পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে কোথায় যোগাযোগ করতে হয়

সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশন:

প্রতিটি সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা থাকে যে আবেদন কারীর প্রদেয় সকল তথ্য শতভাগ সঠিক এবং নির্ভুল হতে হবে। যদি কোন প্রার্থী মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তথাপি কিছু কিছু আবেদনকারী জেলা কোটা সহ বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য সরকারি চাকরির আবেদন করার সময় মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন। যার জন্য নিয়োগ কর্তাকে নিয়োগ দানের পূর্বে আবেদনকারীর দেওয়া সকল তথ্য সরজমিনে যাচাই বাচাই করার প্রয়োজন হয়। সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজটি করে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের জেলা বিশেষ শাখা (DSB)।

তারা সরজমিনে গিয়ে আপনার প্রদের সকল তথ্য যাচাই বাচাই করে একটি রিপোর্ট প্রদান করে। এই তদন্তের প্রক্রিয়া গোপনে ও প্রকাশ্যে উভয় ভাবেই হতে পারে। কিছু চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগের পূর্বেই পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। আর কিছু নিয়োগে চাকরিতে যোগদানের পর চাকরি প্রার্থী কর্তৃক পুলিশ ভেরিফিকেশন ফর্ম পূরন করে ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে হয়। তবে উভয় ক্ষেত্রেই তদন্ত রিপোর্ট সন্তোষজনক না হলে চাকরিতে যোগদান বা চাকরি স্থায়ীকরন সম্ভব নয়।

চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশনে কি কি দেখা হয়?

  • প্রাথমিক তথ্য : সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশনে প্রথমেই আবেদনকারী বা চাকরি প্রার্থীর প্রাথমিক তথ্য অর্থাৎ প্রার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম জাতীয় পরিচয় পত্র এবং শিক্ষা সনদের সাথে মিল আছে কিনা সেটা যাচাই করা হয়।
  • জাতীয়তা : চাকরি প্রার্থী জাতীয়তাও পুলিশ ভেরিফিকেশনে যাচাই করাই হয়। অর্থাৎ প্রার্থী জন্ম সূত্রে বাংলাদেশী নাগরিক কিনা সেটি দেখা হয়।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা : চাকরিতে আবেদন করার সময় আপনি শিক্ষাগত যোগ্যতার যেসকল তথ্য প্রদান করেছেন তা আপনার শিক্ষা সনদের সাথে মিল আছে কিনা বা সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করা হয়৷
  • ব্যক্তিচরিত্র: পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় তদন্ত কর্মকর্তা সরজমীনে প্রার্থীর এলাকাই গিয়ে প্রার্থীর চারিত্রিক ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে যাচাই বাচাই করেন। এছাড়াও প্রার্থীর পূর্বের কোন নৈতিক স্খলনের রেকর্ড আছে কি না বা প্রার্থী এরই মধ্যে কোনো সরকারি চাকুরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন কি না এই বিষয় গুলোও দেখা হয়।
  • ফৌজদারি মামলা : আবেদনকারী বা চাকরি প্রার্থীর নামে কোন ফৌজদারি, রাজনৈতিক, বা অন্য কোনো মামলায় অভিযুক্ত, গ্রেফতার, দণ্ডিত ও নজরবন্দি কি না তা পুলিশ ভেরিফিকেশনে সময় দেখা হয়৷ এটি নিয়ে আমাদের একটি বিস্তারিত পোস্ট রয়েছে আপনি চাইলে সেটি দেখতে পারেন মামলা থাকলে কি সরকারি চাকরি হয়? বাস্তবতা কি বলে!
  • রাজনৈতিক আবস্থা : সরকারি চাকরিতে রাজনৈতিক আবস্থা খুব বেশি প্রভাব না ফেললেও পুলিশ ভেরিফিকেশনে প্রার্থী কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য আছে কি না তা যাচাই৷ এমনি কি প্রার্থীর পরিবার বা নিকট আত্মীয়র ব্যক্তিদের রাজনৈতিক আবস্থার খোঁজ খরব নেওয়া হয়। এছাড়াও প্রার্থী কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী বা নাশকতামূলক কর্যকলাপে জড়িত আছেন বা ছিলেন কি না তাও তদন্ত কর্মকর্তাগন দেখে থাকেন।
  • বৈবাহিক অবস্থা: যেসকল চাকরিতে আবিবাহিত থাকার শর্ত দেওয়া হয় সেই সকল সরকারি চাকরি পুলিশ ভেরিফিকেশনে প্রার্থী এলাকাই গিয়ে প্রার্থীর বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়।
  • থানার রেকর্ডে যাচাই : থানার রেকর্ডে প্রার্থীর সম্পর্কে কোন কিছু লিখিত আছে কি না তা পুলিশ ভেরিফিকেশনে যাচাই করা হয় ৷
  • বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : পুলিশ ভেরিফিকেশনের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ হচ্ছে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যাচাই। অনেক প্রার্থী জেলা কোটা পাওয়ার জন্য স্থায়ী ঠিকানা অন্যটি ব্যবহার করেন। যার কারনে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা ভেরিফিকেশনের জন্য বাড়ির দলিলের কপি বা বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/ওয়াসার বিল ইত্যাদির কপি চাওয়া হয়।

উপরে উল্লেখিত বিষয় গুলো ছাড়াও আবেদনের ধরন এবং চাকরি অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় অন্য যে কোনো বিষয়ে তদন্ত হতে পারে। যেমন: প্রার্থীর জন্মতারিখ, একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, কোটাধারী কি না, মুক্তিযোদ্ধার পুত্র/কন্যা/নাতি/নাতনি কি না ইত্যাদি।

সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশন

শেষ কথা :

সরকারি চাকরির একটি আবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন। চাকরিতে যোগদানের সময় আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন না হলেও পরবর্তীতে আপনাকে আবশ্যই পুলিশ ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে। কেননা পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া কোন ভাবেই আপনার চাকরি স্থায়ী করন করা হবে না।আর চাকরি স্থায়ী করন না হলে আপনি পদোন্নতি পাবেন না। সর্বোপরি পুলিশ ভেরিফিকেশন কম্পিট না করলে আপনি আপনার সার্ভিস লাইফে ধাপে ধাপে ঝামেলার সম্মুখিন হবে। আর এই চিন্তা থেকেই মূলত এই পোস্টটি। আশা করি এই পোস্টে আপনি সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।

Visited 18 times, 1 visit(s) today

Leave a Comment