জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন কিভাবে | A to Z

সরকারি চাকুরিজীবীদের সমাজিক সুরক্ষার একটি অন্যতম আর্থিক তহবিল হচ্ছে জিপিএফ বা সাধারণ ভবিষ্যত তহবিল। তবে জিপিএফ কেবল মাত্র সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত এবং আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সরকারি নিয়ম নীতি অনুসরণ করে এমন সকল কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীর জন্য জিপিএফ বা সাধারণ ভবিষ্য তহবিল করে। তবে জিপিএফ বেশি আলোচিত হয় সরকারি চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রেই। আর এই আলোচনায় আমরা জিপিএফ বা সাধারণ ভবিষ্যত তহবিল কি? কিভাবে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন? কিভাবে জিপিএফ হিসাব করবেন সহ জিপিএফ রিলেটেড গুরুত্বপূর্ন বিষয় গুলো সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে মূল আলচনার দিকে যাওয়া যাক।

আরও পড়ুন : সরকারি চাকরির আবেদনে ছবির সাইজ

জিপিএফ কি?

জিপিএফ (GPF) এর পূর্নরূপ হচ্ছে General Provident Fund বা সাধারণ ভবিষ্য তহবিল। এটি দেশে প্রভিডেন্ট ফান্ড নামেও পরিচিত। জিপিএফ হচ্ছে মূলত সরকারি চাকুরিজীবীদের অবসরকালীন অর্থিক সুরক্ষা স্কিম। সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত বা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকুরিজীবীর চাকরি কালীন সময়ে প্রতি মাসে তার মূল বেসিক বেতনের ৭-১০% বাধ্যতামুলক ভাবে কেটে একটি নির্দিষ্ট তহবিলে জমা রাখা হয়। এবং জমাকৃত টাকার উপর বার্ষিক ১৩% হারে উক্ত প্রতিষ্ঠান মুনাফা প্রদান করে। এভাবে সুদাসলে জমাকৃত অর্থ উক্ত চাকরিজীবীকে কে চাকরি কাল শেষে প্রদান করা হয়। এই ভাবে টাকা জমা রাখার তহবিলকেই বলা হয় জিপিএফ বা সাধারণ ভবিষ্য তহবিল বা প্রফিডেন্ট ফান্ড।

সাধারণ ভবিষ্যত তহবিল হল সরকারি চাকুরিজীবী অন্যতম সেরা সঞ্চয়ের মাধ্যম। একজন সরকারি চাকুরিজীবী তার মূল বেসিক বেতনের সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত জিপিএফ এ জমা রাখতে পারেন। অর্থাৎ কেউ যদি জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে ১০ গ্রেডের কোন চাকরি করে থাকেন তাহলে তার চাকরির শুরুতে তার মূল বেসিল বেতন হবে ১৬,০০০ টাকা। যেখান থেকে তিনি সর্বোচ্চ ২৫% অর্থাৎ ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত জিপিএফ এ জমা রাখতে পারেন। তবে সাধারণ ভবিষ্য তহবিলে জমাকৃত অর্থ কেউ চাইলেন যখন তখন উত্তোলন করতে পারবেন। একটি নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরই কেবল এই অর্থ উত্তোলন করা যাবে।

জিপিএফ ব্যালেন্স চেক :

আপনার জমা কৃত সাধারণ ভবিষ্য তহবিল বা জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার জন্য সর্ব প্রথম আপনাকে আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলের যে কোন একটি ব্রাউজার ওপেন করতে হবে।

তারপর ব্রাইজারের সার্চবারে https://www.cafopfm.gov.bd/ এই লিংকটি হবুহু টাইপ করে ইন্টার করতে হবে। অথবা এখান থেকে সরাসরি এই লিংকে উপর ক্লিক করতে হবে।

এরপর আপনার সামনে Office of the Chief Accounts & Finance Officer, Pension and Fund Management এর ওয়েব সাইটের হোম পেজ ওপেন হবে। সেখানে GPF Information এর ঘর থেকে “Click Here” এ ক্লিক করতে হবে।

জিপিএফ ব্যালেন্স চেক homepage

এবার আপনার সামনে NID/Smart Card এবং Phone Number ফর্ম যুক্ত একটি পপ আপ ওপেন হবে। সেখানে আপনার ফিক্সেশনে দেওয়া NID/Smart Card নাম্বার এবং Phone Number দিয়ে Submit বাটনে ক্লিক করতে হবে।

জিপিএফ ব্যালেন্স ইনফরমেশন

Submit বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে Employee Verification নামে আর একটি পপ আপ ওপেন হবে। যেখানে আপনার প্রদেয় ফোন নাম্বারে প্রেরিত ৬ ডিজিটের OTP কোডটি চাওয়া হবে।

জিপিএফ ব্যালেন্স চেক ওটিপি

OTP কোডটি দিয়ে Submit বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে GPF INFORMATION নামে আর একটি পেজ ওপেন হবে। সেখান থেকে GPF ACCOUNTS SLIP অংশে fiscal year সিলেক্ট করে GO বাটনে ক্লিক করতে হবে। সর্বশেষ জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার জন্য নতুন করে fiscal year সিলেক্ট করার প্রয়োজন নেই।

জিপিএফ ব্যালেন্স চেক ফিক্সেশন ইয়ার

fiscal year সিলেক্ট করার পর GO বাটনে ক্লিক করলেই আপনার সামনে জিপিএফ একাউন্ট সেটমেন্ট প্রদর্শিত হবে। আপনি চাইলে সেই কপিটি ডাউনলোড বা প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।

জিপিএফ ব্যালেন্স স্ট্রেটমেন্ট

জিপিএফ হিসাব করার নিয়ম :

  • সাধারণ ভবিষ্যত তহবিল বা জিপিএফ এর সম্ভাব্য  ভবিষ্যত হিসাব বের কবার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে https://www.bangladesh.gov.bd/gpf/future_balance.php এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে।
  • এরপর “বছরের সংখ্যা” এর ঘরে আবসর পর্যন্ত সম্ভাব্য কত বছর চাকরি করতে পারবেন সেটি উল্লেখ করবেন। যত বছর উল্লেখ করবেন নিচে ততটি ঘর তৈরি হবে।
  • তারপর “প্রারম্ভিক স্থিতি” এর ঘরে ০০০ দিবেন।
  • এবং “কর্তন” এর ঘরে বেসিক বেতনের ১০% হিসাবে যত টাকা আসবে সেটি লিখবেন। সাথে সাথে ১৩% সুদ আসলে বছরান্তে কত স্থিতি হবে তা দেখতে পাবে। এবং সর্বশেষ ঘরে আবসরের সময় কত টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ড বা জিপিএফ পাবেন সেটি দেখতে পাবেন।

শেষ কথা :

জিপিএফ হল সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য একটি চমৎকার আর্থিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। যেটি আবসরের পর একজন চাকুরিজীবীর অর্থ সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে। একই সাথে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও এটি একটি কার্যকরি ব্যবস্থা। কারন ধীরে ধীরে এইভাবে এতগুলো টাকা জমা করা একটু কষ্টসাধ্য। আর আশা করছি কিভাবে জিপিএফ হিসাব করবেন, জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন কিভাবে সহ জিপিএফ রিলেটেড গুরুত্বপূর্ন বিষয় গুলো সম্পর্কে এই পোষ্টে তথ্যবহুল আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছি।

Visited 28 times, 1 visit(s) today

Leave a Comment